ভারতের উপরাষ্ট্রপতি[Vice-President of India]

  • ভারতীয় সংবিধানের ৬৩ নং ধারা অনুযায়ী ভারতের একজন উপরাষ্ট্রপতি থাকবে। রাষ্ট্রপতির পরই উপরাষ্ট্রপতির স্থান ।
  • ভারতীয় সংবিধানের ৬৪ নং ধারা অনুযায়ী তিনি পদাধিকার বলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানরূপে(ex-officio Chairman) রাজ্যসভার অধিবেশন পরিচালনা করেন ।
  • ভারতীয় সংবিধানের ৬৫ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির সব কাজ করে থাকেন ।

উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নির্বাচন ও যোগ্যতাবলী(ধারা ৬৬):-

  • নির্বাচন
    • ভারতীয় সংসদের উভয়কক্ষের(লোকসভা ও রাজ্যসভা) নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যদের দ্বারা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
    • সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।
    • এই জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ গোপন ব্যালটে হয়।
    • উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন বিতর্ক সৃষ্টি হলে সুপ্রিম কোর্ট তার সমাধান করে।
  • যোগ্যতা
    • উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে ।
    • তাঁর বয়স অন্তত ৩৫ বছর হতে হবে ।
    • তাঁকে লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে ।
    • উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সময় তিনি কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের অধীনে কোনও লাভজনক পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না ।
    • উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত কোন ব্যক্তি সংসদ বা রাজ্যবিধান সভার সদস্য হতে পারবেন না । সংসদ বা রাজ্যবিধান সভার কোন সদস্য যদি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন তাহলে উপরাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার পূর্বে উক্ত পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে।

কার্যকাল(ধারা ৬৭):-

  • উপরাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন । মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত নয়া হওয়া পর্যন্ত নিজের পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।
  • মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে উপরাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র প্রেরণ করবেন।
  • অসাংবিধানিক আচরণের জন্য উপরাষ্ট্রপতিকে বরখাস্ত করার পদ্ধতি রাষ্ট্রপতির মত। রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে প্রস্তাব সংসদের উভয় কক্ষে উত্থাপিত করা যায় কিন্ত উপরাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাজ্যসভায় উত্থাপন করা যায়।

উপরাষ্ট্রপতির শূন্যপদ পূরণ(ধারা-৬৮):-

  • উপরাষ্ট্রপতির মেয়াদে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়।
  • উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব(সর্বাধিক বা সর্বনিম্ন কত দিন হতে পারে সে সম্পর্কে সংবিধানে কিছু বলা নেয়) সম্পন্ন করতে হয় নিম্নলিখিত কারনে পদটি শূন্য হলে
    • উপরাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে
    • উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারিত করা হলে
    • উপরাষ্ট্রপতির মৃত্যু হলে

উপরাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ(ধারা-৬০):-

  • রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত কোন ব্যক্তি উপরাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

ভাতা:-

  • উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে বেতন ভোগ করেন।
  • যখন তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে কাজ করেন, তখন তিনি রাষ্ট্রপতির মতই বেতন ভোগ করেন, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নয়।
  • ভারতের কনসলিডেটেড তহবিল থেকে বেতন ধার্য করা হয়।
  • উপরাষ্ট্রপতির বর্তমান বেতন ৪ লক্ষ টাকা।

ক্ষমতা ও কার্যাবলী:-

  • উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে রাজ্যসভার সভাপতি।
  • উপরাষ্ট্রপতির রাজ্যসভায় ভোটাধিকার নেই।
  • রাজ্যসভার সমস্ত বিল, প্রস্তাব ও মোশন গুলি তাঁর সম্মতিক্রমে পাশ হয়।
  • রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে তিনি সেই পদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন।(সর্বাধিক ৬ মাসের জন্য)
  • উপরাষ্ট্রপতি যখন কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি হিসাবে কাজ করেন তখন তিনি রাজ্যসভার সভাপতি বা চেয়ার পার্সেনের দায়িত্ব পালন করেন না এবান ভাতাও গ্রহণ করেন না। তখন তিনি রাষ্ট্রপতির বেতন ও ভাতা পেয়ে থাকেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

  • উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর মনোনয়ন পত্র কুড়ি(২০) জন নির্বাচকের দ্বারা প্রস্তাবিত এবং কুড়ি(২০) জন নির্বাচকের দ্বারা সমর্থিত হতে হবে।
  • উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে ১৫০০০ টাকা জামানত হিসাবে জমা করতে হবে।
  • স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপ্ললী রাধাকৃষ্ণন।
  • ডঃ সর্বপ্ললী রাধাকৃষ্ণন একমাত্র উপরাষ্ট্রপতি যিনি পরপর দুবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
  • ডঃ জাকির হোসেন ভারতের প্রথম মুসলিম উপরাষ্ট্রপতি।
  • কে আর নারায়ণন স্বাধীন ভারতের প্রথম দলিত উপরাষ্ট্রপতি।
  • ভি. ভি. গিরি ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি যিনি কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
  • ভি. ভি. গিরি ভারতের একমাত্র উপরাষ্ট্রপতি যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।